বর্ষা মৌসুমে আমন ধান চাষের মাধ্যমে সাধারণ কৃষকরা মূলত তাদের বাৎসরিক ভরণপোষণের ব্যয়ভার মিটিয়ে থাকে।
সেই আমন চাষে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পানি সংকট। ক্ষেতে পানির চাহিদা পূরণে নদীর জোয়ার ও বন্যার অতিরিক্ত পানি ওঠা-নামায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে সুইসগেট। সেই সুইসগেটগুলো স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবৈধ দখলে থাকায় রোপা আমন চাষের ক্ষেতে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা।
এমন চিত্র পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার সব ইউনিয়নের সুইসগেটগুলোতে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেও মেলেনি কাঙ্খিত সুফল। কৃষকদের দাবি অচিরেই যেন সরকার কর্তৃক সুইসগেটগুলো দখলমুক্ত করণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ছোট ছোট খালে নির্মিত সুইসগেটগুলো অবৈধ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘন বেহেন্দি জাল দিয়ে পোনা মাছ শিকারের কারণে একদিকে ক্ষতি হচ্ছে মৎস্য সম্পদ অপরদিকে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে আমন ধান চাষে।
আমন ক্ষেতে তারা পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় পানি। বেশির ভাগ আমন ধানের চারা রোপনকৃত ক্ষেতে পানি না থাকার কারণে শুকিয়ে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। চলতি বছরে এমনিতেই বর্ষা কম হওয়ায় জেলার বেশিরভাগ এলাকায় সেচ মেশিনের মাধ্যমে বীজতলা তৈরি ও বীজের চারা রোপন করতে হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসলেও সেখানে বাধ সেধেছে সুইসগেট দখলদাররা। তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা না করে মাছ ধরার প্রয়োজনে পেশীশক্তি ব্যবহার করছে। তাই কৃষকরা তাদের ক্ষেতে প্রয়োজনীয় পানি পাচ্ছে না। তাছাড়া ফলন বৃদ্ধিতে সার ও পোকা-মাকড় থেকে রক্ষার জন্য কীটনাশক প্রয়োগে পানির প্রয়োজনীয়তা অনস্বিকার্য। চলতি বছর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে গলাচিপা সদর ইউনিয়নের প্রায় শত কৃষক কর্তৃক লিখিত অভিযোগকারীদের নেতৃত্বে থাকা রুহুল আমিন গাজী বলেন, স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থেকে কিছু অসাধু জেলেরা ঘন বেহেন্দি জাল দিয়ে সুইসগেট ব্যবহার করে পোনা মাছ শিকার করে। এতে করে আমন ক্ষেতে প্রয়োজনীয় পানি পাই না। ফলে ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়ায় আমনের রোপা বীজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি কর্মকর্তা দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, সুইসগেটগুলোর ব্যাপারে কিছু লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। এদের মধ্যে কয়েকটি সমস্যার সমাধান করেছি এবং বাকিগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমার উপরস্থ কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।এ বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি।
বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম বলেন, সুইসগেট দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে পিইআইপি প্রকল্পের মাধ্যমে সুইসগেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হবে।